প্রথম সাবর্বিটাল ফ্লাইটের সময় ব্র্যানসন একা ছিলেন না। তিনি তার তিন ঘনিষ্ঠ সহকর্মীকে ভিএসএস ইউনিটিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। মহাকাশযানটি দুটি পাইলট দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল।

রিয়েল টাইমে ব্র্যানসনের ফ্লাইটটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিল। আমেরিকান কৌতুক অভিনেতা এবং টেলিভিশন হোস্ট স্টিফেন কলবার্ট এই সরাসরি সম্প্রচারের নেতৃত্ব দেন। পৃথিবীতে ইউনিটি ফিরে আসার পরে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই সফল ভ্রমণ উদযাপন করা হয়েছে। সঙ্গীতশিল্পী খালিদ তার নতুন গান শ্রোতাদের সামনে উপস্থাপন করেন এবং ফ্লাইটে ভ্রমণ করে মুগ্ধ হয়ে রিচার্ড ব্র্যানসন তার অনুষ্ঠানে আগমনকারী সকল অতিথিদের র‍্যাফেল ড্র এর মাধ্যমে দুটি টিকিট দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। ছবিতে: রিচার্ড ব্র্যানসন এবং তার সহযাত্রীরা।

অবশ্যম্ভাবীভাবে ব্র্যানসনের প্রথম ভবিষ্যদ্বাণী হল মহাকাশ পর্যটন নিয়ে। বিশ্বের প্রথম স্পেস ট্যুরিজম বিষয়ক পাবলিক কোম্পানি ভার্জিন গ্যালাকটিকের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বাস করেন যে শীঘ্রই সবাই মহাকাশে উড়তে সক্ষম হবে। ব্র্যানসনের মতে, এটি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে হতে পারে। তবে এই ধরনের ফ্লাইটের একটি টিকিট বেশ ব্যয়বহুল হবে যার সর্বনিম্ন মূল্য হবে $২৫০,০০০ ইউ এস ডলার। উল্লেখযোগ্যভাবে, লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও, অ্যাশটন কুচার, জাস্টিন বিবার এবং অন্যান্য ধনী ব্যক্তিরা ইতিমধ্যে তার মহাকাশযানে একটি ফ্লাইট রিজার্ভ করে রেখেছেন। এর মধ্যে প্রায় এক হাজার মানুষ ফ্লাইট রিজার্ভ করে ফেলেছেন।

ছবিতে: রিচার্ড ব্র্যানসনকে নিয়ে ভিএসএস ইউনিটির টেকঅফ, ১১ই জুলাই, ২০২১।

একবিংশ শতাব্দীর নতুন ট্রেন্ড হচ্ছে নবায়নযোগ্য শক্তি। ব্যবসায়ী, সেলিব্রেটি এবং সাধারণ মানুষ পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে অনেক বেশী উদ্বিগ্ন। ব্র্যানসন মনে করেন যে বর্তমানে সবচেয়ে আশাব্যঞ্জক ক্ষেত্র হচ্ছে নবায়নযোগ্য শক্তি (ক্লিন এনার্জি)।

তেলের মতো প্রচলিত প্রাকৃতিক সম্পদের মজুদ ধীরে ধীরে হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়াও, ব্র্যানসনের মতে, যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার ক্লিন এনার্জিকে বিবেচনায় নেওয়া উচিত। তিনি বড় ব্র্যান্ডকে ক্লিন এনার্জির উপর লভ্যাংশ প্রবর্তনের পরামর্শ দিয়েছেন। অন্য কথায়, এর অর্থ দাঁড়ায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে তাদের মুনাফার কিছু অংশ বিনিয়োগ করা।

আবার ফ্লাইংয়ে ফিরে যাওয়া যাক। ব্র্যানসন বিশ্বাস করেন যে অদূর ভবিষ্যতে সমস্ত বিমান একচেটিয়াভাবে ক্লিন এনার্জিতে উড়বে। এটি দ্রুততর করার জন্য, এই ব্যবসায়ী জেট জ্বালানিতে ইস্পাত এবং অ্যালুমিনিয়াম প্ল্যান্টের বর্জ্য রিসাইকেল করার প্রস্তাব দিয়েছেন। বর্তমানে, বিমান ইন্ডাস্ট্রি পরিবেশ বান্ধব নয়। তবে ব্র্যানসন মনে করেন যে ভবিষ্যতে এসব পরিবর্তন করা উচিত।

ব্র্যানসনের মতে, খুব শীঘ্রই শব্দের গতিতে 'পয়েন্ট এ' থেকে 'পয়েন্ট বি' তে যাওয়া সাধারণ বিষয়ে পরিণত হবে। ব্র্যানসন আত্মবিশ্বাসী যে অদূর ভবিষ্যতে সুপারসনিক গণপরিবহন (ভ্রমণের সময় কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক মিনিটে কমিয়ে আনা যাবে) সহজলভ্য হবে। ২৮ জন যাত্রী ধারণক্ষমতা সম্পন্ন দ্রুতগামী যানবাহন ২০৩০ সালের মধ্যে চালু হবে।

বর্তমানে ব্র্যানসনের কোম্পানি সুপারসনিক পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম, হাইপারলুপ (ছবিতে) নিয়ে কাজ করছে। ভার্জিন হাইপারলুপ ভ্যাকুয়াম ট্রেনের গতি বর্তমানে ১.১২৬ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় পৌঁছেছে। এছাড়াও, এটি একটি পরিবেশ বান্ধব পরিবহন।

ব্র্যানসন আরও বিশ্বাস করেন যে আগামী দশকে 'সাস্টেইনেবল কালচার্ড মিট' অনেক মানুষের জন্য একটি সুলভ খাদ্য হয়ে উঠবে। এই ধনকুবের বলেছেন যে তিনি ভাল এবং পুষ্টিকর মাংসের বিরোধী নন। তবে তার মতে মাংসজাত পণ্য উৎপাদনের আধুনিক পদ্ধতিগুলো পরিবেশ বান্ধব নয়। রিচার্ড ব্র্যানসন কালচার্ড মিট কোম্পানি মেমফিস মিটসে বিনিয়োগ করেছেন। ব্র্যানসন জোর দিয়ে বলেছেন, "আমি নিশ্চিত ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পিছনে ফিরে তাকাবে এবং বর্তমানে আমাদের গৃহীত মাংস উৎপাদন পদ্ধতি দেখে হতবাক হয়ে যাবে,"

বিলিয়নিয়ার উল্লেখ করেছেন যে মেমফিস মিটের মতো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে কৃত্রিম মাংস আরো সাশ্রয়ী হবে। ব্যবসায়ী আরও জোর দেন যে এই জাতীয় মাংস সুষম ক্যালরি গ্রহণের ক্ষেত্রে আরও কার্যকর হবে এবং মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য কম ক্ষতিকারক হবে। প্রাকৃতিক মাংসের ব্যাপক উৎপাদনে ব্যবহৃত পানির চেয়ে কম পানি ব্যবহার করে কালচার্ড মিট উৎপাদন করা যাবে। ভবিষ্যত মাংস উৎপাদকদের হিসাব অনুযায়ী, বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকর বায়ু নির্গমন ৯০% হ্রাস পাবে।

রিচার্ড ব্র্যানসন মনে করে সেই দিনের আর বেশী দেরি নেই যেদিন সপ্তাহে ৪টি কর্মদিবস পালন করা হবে। প্রযুক্তির অনিবার্য অগ্রগতি এবং অটোমেশনের কল্যাণে তা এখন অদূর ভবিষ্যত। মানুষের বদলে রোবট দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে প্রতিস্থাপিত হবে। সুতরাং, একটি কর্মসপ্তাহ হ্রাস করাই উত্তম পন্থা। ব্র্যানসন জোর দিয়ে বলেছেন যে আর্থিক নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন দেশের সরকারের মানুষকে নতুন এবং প্রাসঙ্গিক দক্ষতার প্রশিক্ষণের বিষয়ে সচেতন হতে হবে।

সবশেষে, ভার্জিন গ্যালাকটিকার প্রতিষ্ঠাতার সর্বশেষ ভবিষ্যৎবাণী বিপণন নিয়ে, আরও সুনির্দিষ্ট করে বলা যায়, নেটওয়ার্ক মার্কেটিং নিয়ে। ব্র্যানসন নিশ্চিত যে আগামী ২০-৩০ বছরের মধ্যে শ্রম বাজারে শূন্যপদের সিংহভাগ নেটওয়ার্ক মার্কেটিং প্রতিষ্ঠাতারা প্রতিনিধিত্ব করবেন।

বর্তমানে, প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষ নেটওয়ার্ক মার্কেটিং নিয়ে কাজ করছেন।